বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২৮ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু রক্ষা বাঁধে ফের ধস

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ ফের কুষ্টিয়া সদরের শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে। ইতোমধ্যে নদী পাড়ের বাড়ি, দোকান, রাস্তাসহ পানির ওপরের ব্লক নদীগর্ভে চলে গেছে।

বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত ৮টা পর্যন্ত অন্তত ১৫০ মিটার এলাকা গড়াই নদে বিলীন হয়েছে। এলজিইডির কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়,গড়াই নদের করাল গ্রাসে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। স্রোতে বেড়িবাঁধ দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। গত দুদিন জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। নদী পাড়ের লোকজন বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে একটি বাড়ি ও একটি দোকান নদীগর্ভে চলে গেছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি অফিসের সমন্বয়হীনতা এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে বাঁধ নির্মাণের কারণে বাঁধে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্লক বাঁধ নির্মাণের চার বছর পার না হতেই সেতুর পূর্ব পাশের বাড়ি, দোকান, রাস্তা ও ব্লক পানিতে ধসে পড়েছে। এর আগে গত রোববার (১৫ আগস্ট) ৫০ মিটার ও ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর একই জায়গায় বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার ব্লক গড়াই নদে বিলীন হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক বছর আগেই নদীর এ স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের অবগত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধান না করলে নদী পাড়ের সব ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। ইতোমধ্যে একটি দোকান ও একটি বাড়ি নদীতে ধসে পড়েছে। অবিলম্বে এ ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা বলেন, নদী পাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ নেই, ভোগান্তিরও শেষ নেই। ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এলজিইডির কুষ্টিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকমল হক বলেন, ওই জায়গা বরাবর নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিংয়ের কারণে সেতু রক্ষা বাঁধে ধস নেমেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসলে এর আসল কারণ জানা যাবে। নিয়ম মেনেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কোনো প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল না। বাঁধ নির্মাণের কাজ আমরা সুন্দরভাবে করেছিলাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন বলেন, ১০ মাস আগে একই জায়গায় বাঁধটিতে ধস নেমেছিল। আবারও ধস নেমেছে। বাঁধটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তারাই এটি দেখাশোনা করবে।

এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকমল হকের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিংয়ের কারণে সেতু রক্ষা বাঁধে ধস নামেনি। ডাম্পিং না করে ব্লক প্লেসিং করার কারণেই এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এলজিইডির কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আবারও বাঁধে ধস নেমেছে। ভাঙন দেখতে সেখানে আমাদের প্রতিনিধিকে পাঠানো হয়েছে। আমরা বিস্তারিত ঢাকা অফিসকে জানাচ্ছি। দ্রুত কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, সেতুটি যাতে কোনো প্রকার ক্ষতির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি উভয়কেই নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া শহরের পাশেই হরিপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নকে শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে গড়াই নদের ওপর ২০১৭ সালে শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি ওই বছরের ২৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ব্লক বাঁধও তৈরি করা হয়। সেতুটি নির্মাণে প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আর সেতুর উভয় পাশের ৪১০ মিটার ব্লক বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে হরিপুর অংশে সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে অন্তত ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার লিমিটেড ওই সেতু ও ব্লক বাঁধ নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। তবে নির্মাণের চার বছর পর বাঁধে ধস নেমেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com